জরুরি, ধাপে ধাপে নির্দেশিকা (সহজ ভাষায়)
বার্ন (পোড়া) যে কারোরই জীবনে কোনো একসময়ে ঘটতে পারে — রান্নাঘরে, গরম পানি ছোঁয়ায়, কেমিক্যাল বা বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায়। দ্রুত সঠিক প্রথমিক চিকিৎসা অনেকক্ষেত্রে জটিলতা ও স্থায়ী ক্ষতি কমাতে পারে। নিচে ধাপে ধাপে করণীয় দেয়া হলো।
১) প্রথম কাজ — নিরাপদ করুন (Stop the source)
প্রথমেই নিশ্চিত করুন আগুন/তাপের উৎস বন্ধ হয়েছে। পোড়া ব্যক্তি যদি আগুনে ঝলসে যাচ্ছে, তাকে দ্রুত ফায়ার-রোল বা প্লেইন কাঁটা কাপড়ে ঢেকে আগুন নিভিয়ে দিন — কিন্তু নিজে ঝুঁকি নেবেন না। রাসায়নিক ছিঁড়ে গেলে লিকেড সরান ও বৃষ্টি জল দিয়ে মুছে ফেলুন (নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে)।
২) ঠাণ্ডা (কুল) করুন — সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ
পোড়া অংশকে ঠাণ্ডা, ঝর ধারাবাহিক চলমান পানি দিয়ে এমনকি সম্ভব হলে ২০ মিনিট ধরে কুল করুন — যত দ্রুত পারবেন। এটি তাপ কমায়, ব্যথা হ্রাস করে এবং গভীরতা বেড়ে যাওয়া আটকায়। কেবল ঠাণ্ডা বা বরফ নয়; বরফ ব্যবহার করলে ত্বকে ক্ষতি হতে পারে — তাই বরফ বা আইস প্যাক ব্যবহার করবেন না। nhs.uk+1
কীভাবে: রান্নাঘরের ট্যাপ/সুইচ চালু করে ঠাণ্ডা (লুকওয়ার্ম) পানি ক্ষতস্থানে 20 মিনিট ধরে ছিটিয়ে দিন। যদি চলতেও না পারেন, পরিষ্কার ঠাণ্ডা কাপড় বারবার ভিজিয়ে কম্প্রেস দিন ২০ মিনিটের জন্য। Queen Victoria Hospital
৩) জামাকাপড় ও গহনা সরান (যদি আটকে না থাকে)
তত্ক্ষণাৎ ক্ষতস্থল থেকে আভরণ বা গহনা (ছড়ানো আংটি, ব্রেসলেট ইত্যাদি) তুলে ফেলুন— কারণ পরে ফোলা শুরু হলে তা কাটা-চাপা সৃষ্টি করতে পারে। যদি পোড়া কাপড় ত্বকের সাথে লেগে থাকে, জোর করে ছোঁড়বেন না; দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান।
৪) ক্ষত ঢেকে রাখুন (cover the burn)
শুদ্ধ, নরম, স্টেরাইল বা পরিষ্কার কাপড় (ক্লিং ফিল্ম বা স্টেরাইল গজ) দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে রাখুন — তবে খুব শক্ত করে বাঁধবেন না। এইটা ইনফেকশন রোধ করবে এবং রোগীকে আরাম দেবে। ধুলো বা ময়লা লাগতে দেবেন না। nhs.uk
৫) ব্যথা ও শক (shock) মোকাবিলা
রোগী দুর্বল বা চঞ্চল হলে তাকে শীতল কিন্তু উষ্ণ রেখেও সাপোর্ট করুন — অর্থাৎ কাঁধে কভারের মতো ঢেকে রক্তচাপ ও শক প্রতিরোধে সাহায্য করুন। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে দ্রুত এমার্জেন্সি ডাক্তারের কাছে নিন। nhs.uk
৬) ওষুধ/বাসা–প্রযুক্তি — কি করবেন এবং কি করবেন না
- করবেন: কুলিং (ঠাণ্ডা পানি), পরিচ্ছন্ন কভার, ব্যথানাশক (যদি প্রয়োজন হয়— যেমন প্যারাসিটামল/ইবুপ্রোফেন, বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডোজ অনুপাতে)।
- করবেন না: মাখন, তেল, টুথপেস্ট, ডিমের সাদা, গৃহ্য হোমরেমেড পেস্ট বা বরফ সরাসরি ক্ষতে দেবেন না — এগুলো ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায় বা ত্বককে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়া বুদবুদ (blister) ফাটাবেন না যদি না ডাক্তার বলে। British Red Cross+1
৭) কখন স্ব-রক্ষণ/গৃহে চিকিৎসা করবেন (Minor burns)
যদি ক্ষত ছোট (শুধু ওপেন স্কিন বা সাপারফিশিয়াল) এবং চোখ/মুখ/হাত/জয়েন্ট/জেনিটালিয়ার মত সংবেদনশীল অংশ নয়, তাহলে ঠাণ্ডা পানি ২০ মিনিট, পরিষ্কার কভার ও সাধারণ ব্যথানাশক দিয়ে বাড়িতে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। ক্ষত ক্রমশ লালচে ও ঔত্সাহজনকভাবে শুকিয়ে গেলে সাধারণত ঠিক হয়ে যায়। RACGP
৮) কখন দ্রুত হাসপাতালে/স্পেশালিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া লাগবে (Seek medical care)
নিচের কোনোটিই থাকলে তারাতারি ডাক্তার বা এমার্জেন্সিতে নিন — এগুলো গুরুতর বার্নের লক্ষণ: World Health Organization+1
- দেহের বড় অংশ পোড়া (প্রাপ্তবয়স্কে সাধারণ নির্দেশনা: >১০–১৫% বা শিশুর ক্ষেত্রে কম) — বিশেষজ্ঞ নির্দেশানুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি লাগতে পারে। World Health Organization+1
- গভীর বার্ন — ত্বক সাদা/কোঊয়া/চামড়ার নিচ পর্যন্ত ক্ষতি (full-thickness)
- মুখ, গলা, শ্বাসনালী/শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা (inhalation injury)
- হাত, পা, জয়েন্ট, চোখ, জেনিটালিয়া-র উপর বার্ন
- বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক বার্ন
- বিস্তৃত বুদবুদ/তীব্র ব্যথা বা রক্তক্ষরণ
- বয়স খুব কম (শিশু) বা অনেক বেশী / পূর্বের রোগ (ডায়াবেটিস, হৃৎরোগ ইত্যাদি)
৯) কেমিক্যাল বা বৈদ্যুতিক বার্নে আলাদা করণীয়
- কেমিক্যাল বার্ন: যদি রাসায়নিক ছিটে যায়, দ্রুত প্রচুর টুকটাক পানি দিয়ে ধৌত করুন (কমপক্ষে 15–20 মিনিট) এবং লেবেল দেখে নির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করুন; কখনোই রিএজেন্ট মিশিয়ে দেবেন না। দ্রুত কারেন্ট—মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে নেবেন। Queen Victoria Hospital
- বৈদ্যুতিক বার্ন: বাহ্যিক ক্ষত ছোট দেখালেও ভেতরে গভীর ক্ষতি থাকতে পারে। ইলেকট্রিকাল বার্ন হলে অবিলম্বে চিকিৎসা মূল্যায়ন দরকার। CHEMM
১০) হাসপাতালে গেলে কী নিতে যাওয়া উচিত (What to bring)
- রোগীর পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি)
- অ্যাপয়েন্টমেন্ট/রেফারেল কাগজ (যদি থাকে)
- যে ওষুধ খাচ্ছিলেন তা ও লিস্ট/বুক্স
- ঘটনার সময় ও কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল তা সংক্ষেপে লিখে নিয়ে যান
- জরুরি যোগাযোগ নম্বর (পরিবারের)
১১) পরবর্তী যত্ন (Aftercare & Follow-up)
- ডাক্তার যে ড্রেসিং দিয়েছেন নিয়মিত পাল্টান এবং স্টেরাইল রাখুন।
- ইনফেকশনের লক্ষণ দেখুন: লালচে বেড়ে যাওয়া, গন্ধ, গা উদ্দীপ্ত জ্বালা, পুঁজ বা জ্বর হলে দ্রুত যোগাযোগ করুন।
- বড় বা গভীর বার্ন হলে ফিজিওথেরাপি ও স্কার ম্যানেজমেন্ট (লেজার, ইনজেকশন, সিলিকন শীট ইত্যাদি) প্রয়োজন হতে পারে—বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। Ameriburn
১২) টিটানাস ভ্যাকসিন সংক্রান্ত পরামর্শ
খোলা ক্ষত হলে টিটানাস রিস্ক থাকতে পারে—আপনার টিটানাস টিকাকরণ আপ টু ডেট কিনা তা যাচাই করে প্রয়োজনে টিকা দিন। (রুগীপ্রাপ্যতা অনুযায়ী চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন।)
১৩) প্রিভেনশন টিপস (ঘরে সহজ ব্যবস্থা)
- রান্নাঘরে গরম তেল/জল খোলা রাখবেন না; ছোটদের হাত পৌঁছানো যাবে না এমন স্থানে রাখুন।
- চুলে আলোক-জ্বলন্ত জিনিস ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন।
- বৈদ্যুতিক তার ও প্লাগ নিয়মিত চেক করুন।
- কেমিক্যাল স্টোরেজ নিরাপদ রাখুন, শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
১৪) সাধারণ FAQ (সংক্ষিপ্ত)
Q: বরফ দিলে কি হবে?
A: বরফ সরাসরি দিলে ত্বকে ফ্রস্ট ইঞ্জুরি বা অতিরিক্ত ক্ষতি হতে পারে — বরফ ব্যবহার করবেন না; বরং ঠাণ্ডা চলমান পানি দিন। British Red Cross+1
Q: বুদবুদ ফাটাবো না কেন?
A: বুদবুদ ভেতরের তন্ত্রাণকে রক্ষা করে; ফাটালে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। যদি খুব বড় করে ব্যথা করে বা ডাক্তার বলে, তখন ফাটাতে হবে। British Red Cross
Q: পেয়েছিলাম পুজ-ভর্তি বা জ্বালাপোড়া ব্যথা—কি করব?
A: ঠাণ্ডা পানি, হালকা কভার ও প্রয়োজনে পেইনকিলার; আর যদি ব্যথা কমছে না বা ত্বক কালো/শ্বেত হয়ে যাচ্ছে—দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।
সারাংশ (Quick checklist)
- আগুন/তাপের উৎস বন্ধ করুন।
- ২০ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা, চালিত পানি দিন। nhs.uk
- গহনা/ছোঁড়া কাপড় আলগা করে তুলুন (যদি আটকে না থাকে)।
- পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- বরফ, মাখন, টুথপেস্ট ইত্যাদি দেবেন না। British Red Cross
- গুরুতর লক্ষণ হলে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিন। CHEMM+1
জরুরি প্রয়োজনে বা কনসালটেশনের জন্য যোগাযোগ করুন
Dr. As Ad Din Mahmud (Asad) — Burn & Reconstructive Surgeon
📱 সিরিয়াল/অ্যাপয়েন্টমেন্ট: 01929-718390
📞 হটলাইন: +880 1787 551888